নকশী কাঁথার মাঠ

 

এক ছিল গ্রাম। সেই গ্রামের এক কোণে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে থাকত রূপাই। রূপাই ছিল দরিদ্র কিন্তু অসাধারণ প্রতিভাবান। তার সুই-সুতোর কাজ দেখে গ্রামের সবাই মুগ্ধ। গাছপালা, নদী, পাখি—প্রকৃতির নানা রূপ তার সেলাইয়ে উঠে আসত।

রূপাইয়ের মা ছিলেন বিধবা। তাদের সংসারে সচ্ছলতা না থাকলেও সুখের অভাব ছিল না। রূপাই তার সূচিশিল্প দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল একটি পুরনো কাপড়, যা তার মা তাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই কাপড়ে সে একদিন "নকশী কাঁথা" বানাবে বলে স্বপ্ন দেখত।

একদিন পাশের গ্রামের এক কৃষক শাজু ফসল বিক্রি করতে রূপাইয়ের গ্রামে এলো। রূপাইয়ের সূচিশিল্প দেখে শাজু মুগ্ধ হয়ে গেল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নিল, এবং একদিন তারা বিয়ে করল।

রূপাই তার প্রিয় কাপড়টি নিয়ে শাজুর বাড়িতে এলো। সেখানে সে তার জীবনের গল্প সেলাই করতে শুরু করল। নদীর ধারে হাঁটতে যাওয়া, বটগাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেওয়া, আর রাতের তারা দেখা—সব স্মৃতি সে তার নকশী কাঁথায় ধরে রাখল।

কিন্তু তাদের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এক বর্ষায় ভয়ংকর বন্যা এল। গ্রামের ফসল নষ্ট হলো, মানুষ ঘরবাড়ি হারাল। শাজু কাজের সন্ধানে শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যাওয়ার আগে সে রূপাইকে কথা দিল, খুব শিগগিরই ফিরে আসবে।

দিন, মাস, বছর পেরিয়ে গেল। কিন্তু শাজু আর ফিরে এলো না। লোকজন বলল, হয়তো সে শহরে অন্য জীবন শুরু করেছে। কিন্তু রূপাই এসব কথায় কান দিল না। সে বিশ্বাস করত, শাজু একদিন ফিরে আসবে। তার নকশী কাঁথায় সে তার অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত সেলাই করল।

একদিন গভীর রাতে ঝড়ের সময় দরজায় কড়া পড়ল। রূপাই দরজা খুলে দেখল, ভেজা আর ক্লান্ত শাজু দাঁড়িয়ে আছে। শাজু অনেক কষ্টের পর ফিরেছে। তাদের ভালোবাসা, ধৈর্য আর অপেক্ষার গল্প যেন নতুনভাবে শুরু হলো।

গ্রামের লোকেরা তাদের ফিরে আসা উদ্‌যাপন করল। আর রূপাইয়ের নকশী কাঁথা হয়ে উঠল ভালোবাসা ও সহনশীলতার প্রতীক।


শিক্ষা: ভালোবাসা ও ধৈর্যের মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করা যায়। যে সম্পর্ক সত্য, তা সবসময় টিকে থাকে।

No comments:

Post a Comment