গোপাল ভাঁড় ও রাজার সোনার আম

 

গোপাল ভাঁড় ছিলেন নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারের একজন বিখ্যাত হাস্যরসিক ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তাঁর বুদ্ধি ও হাস্যরসে ভরা গল্পগুলো আজও বাংলার ঘরে ঘরে শোনা যায়।

সোনার আমের গল্প

একদিন এক বিদেশি বণিক মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে উপহার দিল একটি সোনার আম। আমটি এতই দুর্লভ ও মূল্যবান ছিল যে, মহারাজ ঠিক করলেন এটি কেবলমাত্র সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই দেওয়া হবে। তাই তিনি দরবারে ঘোষণা করলেন,
"যে ব্যক্তি নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী প্রমাণ করতে পারবে, সেই পাবে এই সোনার আম।"

এই ঘোষণা শোনার পর দরবারের সবাই নিজেদের বুদ্ধি দেখানোর চেষ্টা করতে লাগল। কেউ কেউ কবিতা লিখল, কেউ দীর্ঘ বক্তৃতা দিল, আবার কেউ কেউ নানা ধরনের জটিল তর্ক শুরু করল। কিন্তু মহারাজ কাউকেই সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।

তখন গোপাল ভাঁড় উঠে দাঁড়াল। মহারাজ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
"তুমি কীভাবে প্রমাণ করবে যে সোনার আমটি তোমার পাওয়ার যোগ্য?"

গোপাল হাসি মুখে বলল,
"মহারাজ, জ্ঞান কথায় নয়, কাজে প্রকাশ পায়। আপনি যদি আমটি আমাকে দেন, আমি প্রমাণ করে দেখাব কেন আমি এটি পাওয়ার যোগ্য।"

মহারাজ গোপালের আত্মবিশ্বাস দেখে আমটি তার হাতে দিলেন। গোপাল ধন্যবাদ জানিয়ে আমটি কেটে ছোট ছোট টুকরো করল। তারপর সেই টুকরোগুলো দরবারের সবাইকে ভাগ করে দিল, এমনকি মহারাজকেও।

এতে সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
"এটাই কি তোমার জ্ঞান? আমাদের বলো, এতে কী বুদ্ধিমত্তা আছে?"

গোপাল মুচকি হেসে উত্তর দিল,
"মহারাজ, প্রকৃত জ্ঞান হলো সুখ ও আনন্দ ভাগ করে দেওয়া। এই সোনার আম কারো একার সম্পদ নয়, এটি আমাদের সকলের সম্পদ। আমি শুধু এই মিষ্টি ভাগ করে সবাইকে আনন্দ দিতে চেয়েছি।"

মহারাজ এই কথা শুনে খুশিতে হেসে উঠলেন।
"তুমি ঠিকই বলেছ, গোপাল! সত্যিকারের জ্ঞানী সেই, যে নিজের স্বার্থের বাইরে গিয়ে অন্যদের জন্য ভাবতে পারে। এই সোনার আমের প্রকৃত যোগ্য তুমি!"


গল্পের শিক্ষা

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি নিজের সুখ ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অন্যের কল্যাণে কাজ করে। গোপাল ভাঁড়ের মতো চরিত্র বাংলার লোককাহিনিতে আমাদের বুদ্ধি ও মানবিকতার মূল্য বোঝায়।

আপনি চাইলে আরো গোপাল ভাঁড়ের গল্প বা অন্য কোনো লোককাহিনি শেয়ার করতে পারি! 

No comments:

Post a Comment